অদিতির গান শুনে বোঝার উপায় নেই যে, ও সবেমাত্র কলেজ পড়ুয়া কিশোরী মেয়ে। অদিতির গানের গলা বেশ মিষ্টি। গায়কীও দারুণ নান্দনিক। সামনে বসে গান শুনলে পুরোপুরি জাত শিল্পীর আভিজাত্যর ছোঁয়া মেলে অদিতির কণ্ঠে। শুদ্ধ সংগীতের মিষ্টি মেয়ে অদিতি পালের জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকায়। গানের সাথে সখ্য সেই শৈশব থেকেই। অদিতির জন্মের পর থেকেই গান শুনে শুনে বড় হয়েছে সে। কেননা, অদিতির বাবা উত্তম কুমার পাল এবং মা অপর্ণা পাল দু’জনই সংগীত ভক্ত মানুষ। তখনও বাংলাদেশে ইউটিউবের ব্যাপক ব্যবহার শুরু না হওয়ায় বাবা উত্তম কুমার পাল সিডি-ডিভিডি কিংবা পেনড্রাইভ বা মেমোরি কার্ডে করে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বিখ্যাত শিল্পীর গানের সংগ্রহ নিয়ে আসতেন বাসায় শোনার জন্য। এগুলোই ছিলো অদিতির গানের জগতে পদার্পণের শুরুর গল্প। বাবা-মায়ের গান শোনার অভ্যাস থেকে তাদের দেখাদেখি অদিতি যখন হাঁটি হাটি পা পা তখনই গুণগুণিয়ে গান গাওয়া শুরু। এরপর যখন তার বাবা-মা বুঝতে শুরু করলো যে, গানের প্রতি দুর্বার আকর্ষণ আছে অদিতির তখন থেকেই সংগীতে হাতেখড়ি দিতে শুরু করে ছোট্ট অদিতিকে। গানে তালিম নেয়ায় অদিতির প্রথম ওস্তাদের নাম মুনির চৌধুরী। এছাড়াও গান শিখেছেন ওস্তাদ পূজন দাস, অনিরঞ্জন অনি, ওস্তাদ অসিত কুমার মন্ডল এবং কণ্ঠশীলনে তালিম নিয়েছেন খেয়ালী পঙ্কজ কুমার বসুর কাছে। অদিতি ছায়ানটে নজরুল সংগীতের একজন শিক্ষার্থী। ইতোমধ্যে নজরুল সংগীত এবং আধুনিক গানের শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশনে। নিয়মিত বিভিন্ন মঞ্চ, টেলিভিশন এবং বেতারেও গান করছে অদিতি। হলিক্রস কলেজের এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী অদিতির ছোট বেলা থেকেই স্কুল কলেজের অনুষ্ঠান মানে, অদিতির গান। শুধু যে গান তাই নয় একাধারে বিতর্ক, উপস্থাপনা, শ্রুতি নাটিকা পাঠ ও চিত্রাঙ্কনেও অনন্য ও সবার সেরা অদিতি। এসব কিছুতেই ইতোমধ্যে সাফল্যের শীর্ষ বিন্দুতেও পৌঁছে গেছে অদিতি।
গত বছরে অনুষ্ঠিত ইংলিশ অলিম্পিয়াড সিজন ৩ এ প্রথম রানারআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে গানের মেয়ে অদিতি, চিত্রাঙ্কনে পেয়েছে কেপিআর বেস্ট আর্টিস্ট এওয়ার্ড, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের জাতীয় প্রতিযোগিতায় দেশের গানে ‘ঘ’ বিভাগে প্রথম পুরস্কার অর্জনসহ আরও বহু পুরস্কার, সনদ ও সম্মাননা জমা হয়েছে অদিতির সাফল্যের ঝুলিতে। শুধু তাই নয়, এরই মধ্যে অদিতির তিনটি মৌলিক গানও প্রকাশ পেয়েছে। তারমধ্যে জি সিরিজ থেকে প্রকাশিত ‘মন ছুঁয়ে দেখো না’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সংগীতে অদিতির অনুপ্রেরণা বাবা-মা। অবসরে বই পড়তে এবং পরিবারের সবার সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করে অদিতি। গান নিয়ে ভবিষ্যৎ ভাবনা কি জানতে চাইলে অদিতি জানায়- পেশা যাই হোক না কেন সংগীতকে ধারণ করতে চাই সবসময়। সেই সাথে শুদ্ধ সংগীতের চর্চা করে যেতে চাই কেননা সংগীত মানুষের জীবন সম্ভারকে বিচিত্র রঙে উদ্ভাসিত করে। শুদ্ধ সংগীতের অনিন্দ্য পথে অদিতির যাত্রা আরও নিরন্তর হোক এই শুভকামনা রইলো।