পাঁচ দশক ধরে, যার নাম হয়েছে লালনের গানের সমার্থক, সেই সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীন আর নেই। জাগতিক সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে তিনি পাড়ি দিয়েছেন অচিন দেশে। শনিবার রাজধানীর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাত সোয়া ১০টায় তার মৃত্যু হয়। ফরিদা পারভীনের বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। শনিবার ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা ১৫ মিনিটে হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ফরিদা পারভীন সবশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ফরিদা পারভীনকে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় হাসপাতালে নেওয়ার পরই নিয়ে যাওয়া হয় আইসিইউতে। পরে তাকে লাইফ সাপোর্টেও নেওয়া হয়; সেখান থেকে আর তাকে ফেরানো যায়নি।
হাসপাতালে রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফরিদা পারভীনের মেজ ছেলে ইমাম নাহিল বলেন, রাতে তেজকুনি পাড়ার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে মাকে। সেখান থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জোহরের নামাজের আগে প্রথম জানাজা হবে। সেখান থেকে কুষ্টিয়ার বাড়িতে নানা-নানীর কবরে শায়িত করা হবে। ফরিদা পারভীনের স্বামী গাজী আবদুল হাকিম হাসপাতালে সাংবাদিকদের বলেন, ছেলে-মেয়েদের ইচ্ছে অনুযায়ী তাকে কুষ্টিয়ায় দাফন করা হচ্ছে।“সারাদেশের মানুষের কাছে ফরিদা পারভীনের জন্য দোয়া চাই। লালন সংম্রাজ্ঞী এই একজনই।”
বরেণ্য শিল্পী ফরিদা পারভীন বেশ কিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। কিডনি সমস্যা ও ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। কিডনি ডায়ালাইসিস চলছিল সপ্তাহে দুদিন করে। তবে মাঝেমধ্যে অবস্থার অবনতি হত তার। চলতি বছরে তিন দফায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাকে।
১৯৫৪ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর নাটোরে জন্ম নেওয়া ফরিদা বেড়ে ওঠেন কুষ্টিয়ায়। বাবা ছিলেন চিকিৎসক, মা গৃহিনী। সাংস্কৃতিক আবহে বড় হওয়া ফরিদার গানে হাতেখড়ি পাঁচ বছর বয়সে। বাবা-মায়ের উৎসাহে শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেওয়া ফরিদার ইচ্ছা ছিল নজরুলসংগীতের শিল্পী হওয়ার। এগোচ্ছিলেনও সেই পথেই।
রাজশাহী বেতারে নজরুলগীতির শিল্পী হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন ১৯৬৮ সালে। গেয়েছেন আধুনিক ও দেশের গানও। তরুণ বয়সে লালনের গান একরকম ‘উপেক্ষিতই ছিল তার কাছে। তবে সংগীতের অন্য সব ধারাকে পাশে সরিয়ে কীভাবে, কোন তাড়নায় তিনি লালনের গানে নিজেকে বিলিয়ে দিলেন সেই গল্প ফরিদা ফরিদা পারভীনের গাওয়া বেশ কয়েকটি আধুনিক ও দেশের গান জনপ্রিয় হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে আছে ‘তোমরা ভুলে গেছ মল্লিকা দির নাম, ‘এই পদ্মা এই মেঘনা’। বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের গানেও কণ্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী। সংগীতাঙ্গনে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৮৭ সালে একুশে পদক পান ফরিদা পারভীন। ২০০৮ সালে জাপান সরকারের ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’পুরস্কার পান তিনি। সেরা প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৯৩ সালে।