রাষ্ট্রীয় সম্মাননায় ভূষিত হলেন সাবিনা ইয়াসমিন
প্রায় ছয় দশকের পেশাদার সংগীতজীবন। অসুস্থতার কারণে সম্প্রতি খুব বেশি গানে পাওয়া যায়নি তাকে। তবে ৭ সেপ্টেম্বর পাওয়া গেল চিরচেনা সাবিনা ইয়াসমীনকে। সম্মাননা, গান আর স্মৃতিচারণায় হয়ে উঠল মনে রাখার মতো এক সন্ধ্যা। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে ছিল সাবিনা ইয়াসমীনকে সম্মাননা প্রদান এবং তার একক সংগীতানুষ্ঠান। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক বদরুদ্দিন ওমরের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে প্রদর্শিত হয় কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের ওপর নির্মিত ডকুমেন্টারি ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’। ডকুমেন্টারির পরে সমবেত নৃত্য ‘গীতিময় সেই দিন চিরদিন বুঝি আর এলো না’ পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীবৃন্দ। এছাড়া শিল্পীর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। শিল্পীকে সম্মাননা প্রদান করেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান। এছাড়া সাবিনা ইয়াসমিনকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন বরেণ্য সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা, নকিব খান, পার্থ বড়ুয়া, খুরশীদ আলম, রফিকুল আলম ও আবিদা সুলতানা। পরে শিল্পীর একক সংগীতানুষ্ঠানে মুগ্ধ হন সবাই। অনুষ্ঠানে শিল্পী একে একে পরিবেশন করেন ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’ ‘জন্ম আমার ধন্য হলো’ গানগুলো। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নন্দিত অভিনেতা আফজাল হোসেন। সম্মাননা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাবিনা ইয়াসমিন শুরু করেন দেশের গান দিয়ে, গাইলেন ও দেশ তোমার জন্য। এরপর একে একে গেয়ে শোনালেন আমি রজনীগন্ধা ফুলের মত, তুমি ফুলকে বলো চলে যেতে, কত সাধনায় এমন ভাগ্য মেলে গানগুলো।
একজন সাবিনা ইয়াসমীন
১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন সাবিনা ইয়াসমীন। ছয় বছর বয়সে গান গেয়ে প্রথম পুরস্কার জেতেন অল পাকিস্তান স্কুল মিউজিক কম্পিটিশনে। ১৯৬২ সালে রবীন ঘোষের সুরে ছোটদের জন্য গান গেয়ে সংগীতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশ করেন। একই বছর এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে গান করেন। ১৯৬৭ সালে আমজাদ হোসেন ও নুরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ চলচ্চিত্রে প্রথম প্লেব্যাক করেন। এরপর একে একে হয়ে ওঠেন বাংলা গানের অপরিহার্য কণ্ঠস্বর। সত্য সাহা, আলম খান, সুবল দাস, আলাউদ্দিন আলী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলসহ অসংখ্য কিংবদন্তি সুরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রের গানসহ বিভিন্ন ধারায় ১৬ হাজারের বেশি গান রেকর্ড করেছেন এই শিল্পী। আধুনিক গান, পল্লিগীতি, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত ও গজল—সব ক্ষেত্রেই রেখেছেন সুরেলা স্বাক্ষর। বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র শিল্পী, যিনি ১৫ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে রেকর্ড গড়েছেন, পেয়েছেন একুশে পদক (১৯৮৪), স্বাধীনতা পুরস্কারসহ (১৯৯৬) দেশে-বিদেশের বহু সম্মাননা। ২০২০ সালে প্রয়াত কবরী পরিচালিত ‘এই তুমি সেই তুমি’ চলচ্চিত্রে তিনি সর্বশেষ কণ্ঠ দেন। শুধু তা-ই নয়, ছবিটির চারটি গানে প্রথমবার সুরকার হিসেবেও কাজ করেন।