গুলশান-ঢাকার মেয়ে সং গীত অনুরাগী নাসরিন ফেরদৌস চমন। তিনি মূলত লোকসংগীত শিল্পী। কিন্তু আধুনিক, নজরুল, লালনসহ সব ধরনেরই গানর করেন। চমন দর্শক-শ্রোতাদের কাছে অতটা পরিচিত নন কিন্তু একান্তে করে গেছেন সংগীত চর্চা ও সাঙ্গীতিক কর্মকান্ড। শুধু শিল্পী হিসেবে সংগীত পরিবেশনই নয়, বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদ আয়োজিত ইউনেস্কোর পৃষ্ঠপোষকতায় আন্তর্জাতিক লোকসংগীত উৎসবের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেছেন সুন্দরভাবে। মাঝে ১০ বছর স্বামীর চাকরির সুবাদে ইরানে অবস্থানের কারণে সংগীত চার্চায় কিছুটা ছেদ পরলেও সংগীতের মাঝেই বেঁচে থাকতে চান চমন।
চমনের বাবা মো. আবদুল কাদের ছিলেন রাজউক-এর ইঞ্জিনিয়ার ও একজন সংগীতপ্রেমী, মা রাজিয়া বেগম গৃহিনী। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। বড় ভাই ও ছোট ভাই ডাক্তার, ছোট ভাই লন্ডন প্রবাসী এবং মেজো ভাই একটি ব্যাংকে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। সংসার জীবনে স্বামী ডা. মো. ইসহাক আখন্দ একটি মেডিকেল কলেজের প্রফেসর ও একমাত্র ছেলে তানভীর জাভেদ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে ফার্মাসীতে অনার্স শেষ করে অস্ট্রেলিয়ান ইউনির্ভাসিটি অফ সিডনি থেকে মাস্টার্স কমপ্লিট করে বর্তমানে তিনি সিডনিতে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।
চমনের বাবা প্রচন্ড সংগীত ভালোবাসতেন বলে দেশের গুণী ওস্তাদ মো. ওসমান খান, হাসান আলী খান, মমতাজ আলী খান, আব্দুল আলীম, আব্দুল হালিম চৌধুরী, ইন্দমোহন রাজবংশী, আব্দুল করিম, সফদার আলী, অবিনাশ চন্দ্র শীল, আশোতোষ শীল সহ আরও অনেক গুনীজন বাসায় আসতেন এবং গান বাজনা করতেন। আর এভাবেই গানের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয় শিল্পী চমনের। ছোট বেলা থেকেই বাবার কাছে তার সংগীতে হাতেখড়ি। পরে ওস্তাদ মো. ওসমান খানের নিকট প্রথম সংগীত শিক্ষা জীবন শুরু করেন। আর এর মধ্যে তার সুযোগ হয়ে যায় নতুন কুড়িতে অংশ গ্রহণের এবং আমরা নতুন আমরা কুড়ি এই গানটিতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। তারপর ওস্তাদ আকতার সাদমানির নিকট তালিম নেন এবং ইন্দ্রমোহন রাজ বংশীর কাছে গানের উপর তালিম নিতে নিতে মাঝখানে তিনি ইরানে চলে যান তার পর দেশে ফিরে বাংলাদেশ লোক সংগীত পরিষদে যোগদান করেন এবং টানা তিনবার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন এবং ইউনেস্কো প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ ছাড়াও আব্বাস উদ্দিন জন্মশত বার্ষিকীসহ বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নেন। সম্প্রতি তিনি ফিরোজ সাই পিলু মমতাজ ও মমতাজ আলী খান পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে বিশেষ শ্রেণীর শিল্পী হিসেবে অনুষ্ঠান করে আসছেন। তিনি নিজের দেশ ছাড়াও বিভিন্ন দেশে যেমন ইংল্যান্ড, প্যারিস, স্পেন, ইটালী, সুইজারল্যান্ড, জার্মানী, অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন চ্যানেলে গান পরিবেশন ছাড়াও তিনি বিবিসিতে সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। তার বেশ কয়েকটি একক এ্যালবাম ও মিক্সড এ্যালবাম বাজারে সমাদৃত হয়েছে। তার মধ্যে কাঙ্খের কলসী উল্লেখযোগ্য।
চমন সিদ্বেশ্বরী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক; ইডেন গার্লস কলেজ থেকে বিএ ও এমএ ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন। রান্নার কোর্স করেছেন পর্যটন ও সাথী কুকিং একাডেমি থেকে। এছাড়া বিভিন্ন রান্নার উপর কোর্সও করেছেন। টিভিতে রান্নার অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। শিল্পকলা একাডেমিতে লালনগীতি, কানাইলাল শীলের গান, পঞ্চকবি, ভাওয়াইয়া গানের উপর কোর্স করেছেন। ভ্রমণে আগ্রহী সংগীতশিল্পী চমন প্রকৃতিকে অনেক বেশি ভালোবাসেন। জানান, প্রকৃতির সাথে গভীর প্রেম রয়েছে তার। ইরানী গুবলান, নানান ধরনে এমব্রয়ডারী সূচী শিল্প করতে খুব পছন্দ করেন শিল্পী। চমন বলেন, ইরানে ১০ বছর ছিলাম ডা. স্বামীর চাকরির সুবাদে। তিনি ইরানের একটি তেল কোম্পানিতে ডাক্তার হিসেবে ছিলেন। ইরানীরা হাতের কাজের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত এবং নানা ধরনের হাতের কাজে পারদর্শী। ইরানী গুবলান উল্লেখযোগ্য আমি নানা ধরনের ইরানী সেলাই শিখেছি। এই সূচী শৈলী আমার পছন্দ। ইরানী বিভিন্ন ধরনের রান্নাও আমি জানি। এই রান্না যারা খেয়েছেন, তারা সবাই প্রশংসা করেছেন। আমরা আগেই উল্লেখ করেছি ‘গুলশানের মেয়ে চমন’। এখনকার অভিজাত ও ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা গুলশান। শিল্পীর ছোটবেলায় এবং আরও আগে এভাবে বর্ণনা দেন নাসরিন চমন। গুলশানের আদি নাম ছিল ভোলা। আমাদের আদিবাস গুলশান। গুলশান তখন একটি গ্রাম ছিল, পূর্বনাম গুলশানের সাথে সেই গুলশানের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। গুলশানের অনেকগুলো নাম ছিল, যেমন- পাড়ামোনা পুবের বাইত, পশ্চিমের বাইত, আখন্দ বাড়ী, মোল্লাবাড়ী, দর্জিবাড়ি ইত্যাদি।